মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আজ রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। গভীর রাত থেকে মোনাজাতে অংশ নিতে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে ঢল নামে লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির। মানুষের আগমনে বন্ধ হয়ে যায় ময়দানের প্রতিটি প্রবেশ পথ, অলিগলি আর তাবুর মাঝের ফাঁকা জায়গা। লাখো মানুষের আল্লাহু আকবার ধ্বনি, গুঞ্জন আর কোলাহলে চুরমার হয়ে যায় নিরবতা। শীতের সকালেও তুরাগতীরে উষ্ণতা ছড়ায় লক্ষাধিক মুসল্লিদের এই জমায়েত। সবারই এক উদ্দেশ্য- আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ।ভিড়ের মাঝে সাথের মানুষকে খুঁজে পেতেও বেগ পেতে হয় অনেককে। তবে এত ভিড়েও কারও অভিযোগ নেই, বরং আছে অসামান্য ধৈর্য্য আর প্রাপ্তির আনন্দ। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকার বিমানবন্দর রোড, আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা, টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকার সড়কগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। এসব সড়কে মিলিত হওয়া মুসল্লিরাও মোনাজাতে অংশ নেন। অশ্রুসিক্ত নয়নে নিজের ও দেশবাসীর কল্যাণকামনায় আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন। মোনাজাত উপলক্ষে মুসল্লিদের সুবিধার জন্য শনিবার রাত ১২টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস, আব্দুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া রোড হয়ে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী স্টেশন রোড পর্যন্ত সড়ক, আব্দুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল পর্যন্ত এবং মিরের বাজার থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। এর আগে, অন্যান্য মুরুব্বীদের পর তাবলীগ জামাতের কাকরাইল মারাকাজের সূরা সদস্য মওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের সমাপনী বয়ান শুরু করেন মাওলানা জুবায়ের মুসল্লিদের মোনাজাতের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। শুরু হয় আখেরী মোনাজাত।এর আগে ফজরের নামাজের পর পাকিস্তানি মাওলানা জিয়াউল হক আম বয়ান করেন, যা বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা নুরুল রহমান। এদিকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত শেষে পায়ে হেঁটে ফিরতি পথ ধরেছে মানুষের স্রোত। দুর্ঘটনা এড়াতে রাজধানী থেকে উত্তরামুখী সড়কগুলোর দুই পাশেই যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পুলিশের ট্রাফিক গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার হাফিজুর রহমান বলেন, “ঢাকামুখী রাস্তাগুলোতে স্রোতের মত মানুষ হাঁটছে। তাই আমরা এসব সড়কে যাত্রীবাহী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছি। এর মধ্যেই কিছু ছোট যানবাহন ছাড়া হচ্ছে। বড় যানবাহন ছাড়তে আরো কিছুক্ষণ সময় লাগবে।প্রসঙ্গত, ইজতেমায় যোগ দিতে তিন দিন আগ থেকেই টঙ্গীতে আসতে শুরু করেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসল্লিরা। বেশিরভাগ মুসল্লি চলে আসায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই বয়ান শুরু করে ইজতেমা আয়োজকেরা। যদিও সেদিন রাতে বৃষ্টির কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় মুসল্লিদের।তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্বের নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। ৪ ফেব্রুয়ারি এ পর্ব শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা হবে ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি। ওই পর্বের নেতৃত্ব দেবেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা।