২০০৮ সালের ১১ জুন দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর কারামুক্ত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরসূরি বাঙালির আস্থা ও বিশ্বাসের শেষ ঠিকানা গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর মুক্তির মধ্য দিয়ে মুক্ত হয় গণতন্ত্র। কেননা ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে বন্দী করার নামে সেদিন অবরূদ্ধ করা হয়েছিল গণতন্ত্রকে। ১/১১ তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেদিন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া কে মাইনাস ( মাইনাস টু ফর্মূলা)র নামে মূল টার্গেট করেছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিশ্চিহ্ন করার। এই টার্গেট ও পরিকল্পনা হঠাৎ করে নয়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে আবারো পাকিস্তানের ভাবধারায় ফিরিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র ওদের অনেক দিনের। স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রিয় জন্মভূমিতে ফিরে এসে আওয়ামী লীগকে পুন:গঠনের মাধ্যমে দেশে আবার গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা পুন:প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু করেন। সেদিন থেকেই ষড়যন্ত্রকারীদের মূল টার্গেটে পরিণত হন গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য ভয়ঙ্কর একটি চ্যালেঞ্জের দিন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিরূদ্ধে দীর্ঘদিনের চক্রান্তের ধারবাহিকতায় সেদিন আজকের জননন্দিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিতর্কিত করে জনগণের আস্থা ও ভালোবাসার জায়গা থেকে দূরে সরিয়ে ফেলার হীন প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছিল। যদিও সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায় এদেশের আপামর জনগণের প্রতিবাদী ভালোবাসার কাছে। আর এ জন্যই দিনটি স্মরণীয়।
জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কারাগারে পাঠিয়ে এই দেশের গণতন্ত্রকে হত্যার নীল নকশা করেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। তাই ইতিহাসের এই কালো দিনটিকে মুজিবাদর্শের নেতাকর্মী ও গণতন্ত্রকামী দেশের আপামর জনগণ ‘গণতন্ত্র অবরুদ্ধ দিবস’ হিসেবে পালন করে।
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোরে ফখরুদ্দিন-মইনউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ধানমন্ডির নিজ বাসভবন সুধাসদন থেকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের জন্য সুধাসদনের চারদিক বিভিন্ন বাহিনীর দুই সহস্রাধিক সদস্য ঘিরে রেখেছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনা এর মধ্যে ফজরের নামাজ আদায় করেন। সাদা শাড়ি পরিহিতা শেখ হাসিনা যৌথবাহিনীর কাছে জানতে চান, কেন তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে? দেশে কী সামরিক শাসন জারি হয়েছে? কোনো উত্তর ছিল না আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকদের মুখে।
গ্রেফতারের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নামে দেয়া হয় একাধিক মামলা। বাসা থেকে তাঁকে পুলিশের একটি জিপে করে ঢাকার সিএমএম আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত এলাকায় তাঁর নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশবাহিনীর দায়িত্বহীনতার কারণে তিনি নাজেহালের শিকার হন। সেদিন সিএমএম কোর্টে দাঁড়িয়ে বাঙালির আস্থা ও ভালোবাসার ঠিকানা শেখ হাসিনা সরকারের অন্যায় আচরণের বিরূদ্ধে আইনি ভাষায় ৩৬ মিনিট বক্তব্য রাখেন।
সেই সকালেই অগণিত রাজনৈতিক কর্মী নিজের জীবনতে তুচ্ছ ভেবে কোর্টপ্রাঙ্গণে ছুটে গিয়েছিলেন অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে। আদালতে শেখ হাসিনার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে। এরপর শেখ হাসিনাকে জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে বিশেষ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়েরকৃত কয়েকটি মামলায় বিশেষ জজ আদালত তাঁর বিরূদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীতে ওই সব মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে শেখ হাসিনা হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট মামলাগুলোর বিচার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
গ্রেফতারের পরই বঙ্গবন্ধুকন্যার মুক্তির দাবিতে দেশে-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। প্রায় ১১ মাস অতিবাহিত হলে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা করানোর দাবি জানান। উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে কারাবন্দি শেখ হাসিনাকে ২০০৮ সালের ১১ জুন আট সপ্তাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি কান ও চোখের চিকিৎসা নেন। দেশে ফেরার পর আবার তাঁকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলতে থাকে।
কারাবরণের পর প্রায় এক বছর বন্দি ছিলেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা, অবরুদ্ধ ছিল গণতন্ত্র। তথাকথিত তত্বাবধায়ক সরকারের ব্যানারে পদদলিত হয়েছিল ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। তবে ১/১১-এর অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুগত ব্যক্তিদের দেয়া মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করলেও পরবর্তীতে সেই অভিযোগ থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অব্যাহতি পান বঙ্গবন্ধুকন্যা। শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হয়, মুক্তির মিছিলে শামিল হয় লক্ষ কোটি নেতাকর্মী। মূক্ত হয় অবরূদ্ধ গণতন্ত্র।
গ্রেফতারের পর শেখ হাসিনাকে রাখা হয়েছিল জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাব-জেলে। সেখানে খাবারে ক্রমাগত পয়জন মিশিয়ে তাঁকে মেরে ফেলার টার্গেট করা হয়। স্লো পয়জনিংয়ের কারণে বন্দি শেখ হাসিনা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সবই ছিল তাঁকে এদেশের রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জঘণ্য ষড়যন্ত্র। এজন্য ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর তাঁর দেশে ফেরার ওপর বিধিনিষেধ জারি করে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন বীরদর্পে । উদ্দীপিত আর অনুপ্রাণিত হয় আওয়ামী লীগের লক্ষ কোটি নেতাকর্মী। যৌথবাহিনী তাঁকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করার পর গণমানুষ তাঁর অনুপস্থিতি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বাস আর আস্থা বহুগুণে বেড়ে যায় দেশের মানুষের কাছে।
সে সময় শেখ হাসিনার সাব-জেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের উদ্বেগ, গ্রেফতারের সংবাদ শুনে দেশের বিভিন্ন স্থানে চারজনের মৃত্যুবরণ, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের উৎকণ্ঠা বদলে দিয়েছিল রাজনৈতিক দৃশ্যপট। কারণ তখন আদালতের চৌকাঠে শেখ হাসিনা ছিলেন সাহসী ও দৃ