চ্যালেঞ্জের মুখে সাংবাদিকতা কত টুকু বৈধ্য ? হয়তো শিরোনাম দেখে অনেকে অনেক কিছু ভাবতে পারেন কিন্ত আজ অমি বলবো বর্তমান সাংবাদিকতার পরিস্থিতী নিয়ে। একদিকে চ্যালেঞ্জের মুখে সাংবাদিকতা অপরদিকে অপেশাদার দালালদের চক্রে এই পেশার নাজেহাল। গণমাধ্যম জাতির জন্য আয়না। সেই আয়নায় ভেসে ওঠে জাতির ও দেশের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু যারা সমাজের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেন সেই গণমাধ্যমকর্মীরা কর্মক্ষেত্রে অনিশ্চয়তায় ভোগেন। এছাড়া সাংবাদিকদের নানা চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়। বর্তমান সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। তবে সেখানে একটা প্রশ্ন রয়েছে। কেন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এত সব আইন। সব মিলে সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জের মুখে সাংবাদিকদের কাজ করতে হয়। হয়তো দীর্ঘ পথপরিক্রমায় সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যম আমাদের দেশে একটি ভিত্তিভ‚মি নির্মাণ করেছে। সংবাদমাধ্যম এখন আগের তুলনায় অনেক পরিবর্তিত একটি মাধ্যম। এক সময় বলা হতো সাংবাদিকরা জন্ম নেয়। কিন্তু কালের আবর্তে দেখা যাচ্ছে সাংবাদিকদের তৈরী করা যায়। এক সময় সাংবাদিকতার জন্য কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন অনুভূত হতো না। এসব ধারণা এখন পাল্টে গেছে। বর্তমান সময়ে যোগাযোগ গবেষণা বা গণমাধ্যম গবেষণার বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকতাকে নিয়ে আসা হয়েছে। যেটা বিশ্ব ব্যাপী পরিলক্ষিত। বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা পেশায় সবচেয়ে আধিপত্য বিস্তারকারী প্রযুক্তি হলো ইন্টারনেট। এটি তথ্য ও যোগাযোগের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের সকল ক্ষেত্রে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে। ১৯৯৬ সালের ৪ জুন ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক (আইএসএন) নামের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে প্রথমবারের মত ‘অনলাইন’ ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত করে নবদিগন্তের সূচনা করে । কিন্ত এখন পরিতাপের বিষয় অন লাইনে ভূল ভাল সংবাদ সাংবাদিকতাকে তলানীতে নামিয়ে দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে ‘সাংবাদিকতা তোপের মুখে’ (জার্নালিজম আন্ডার ফায়ার)। কথাগুলো আমার নয়, জাতিসংঘের সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর। কোনো সাংবাদিক জেনেশুনে কাউকে হেয় করার জন্য মিথ্যা নিউজ প্রচার করা যেমন বেআইনী তেমনি টাকার বিনিময়ে সংবাদ চেপে দেওয়া অপরাধীর সামিল। আর বর্মমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ যায়গায় এ ধরনের সাংবাদিকতা চলছে। একজন প্রকৃত সাংবাদিক কখনো জেনেশুনে কাউকে হেয় করার জন্য মিথ্যা নিউজ প্রচার করেন না এবং টাকার বিনিময় কারো পক্ষে বা বিপক্ষে সংবাদ পরিবেশন করেন না।কিন্ত বর্তমানে চরিত্রহননের, মর্যাদাহানির এমন অনেক ঘটনা কিন্তু অহরহ ঘটে। যারা ইচ্ছা করে করেন, তাদের তো আমি সাংবাদিকই মনে করি না। তারা সাংবাদিকতার নামে ধান্দাবাজি করেন, চাঁদাবাজি করেন। এমন ধান্দাবাজের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। কিন্তু যারা পেশাদার সাংবাদিক, তারাও মাঝে মাঝে ভুল করেন। হয়তো এটা অদক্ষতা হতে পারে, ভুল হতে পারে, অপেশাদারিত্ব হতে পারে, খামখেয়ালি হতে পারে।তাই সাংবাদিকদের প্রত্যেকটি অক্ষর লেখার আগে বা কোনো ছবি ছাপার আগে তার সত্যাসত্য যাচাই করতে হবে। প্রয়োজনে একাধিকবার যাচাই করতে হবে। ভুল নিউজ বা ছপি ছাপার চেয়ে না ছাপা অনেক ভালো। কিন্তু আমাদের গণমাধ্যমে এখন এমন একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে, কে কার আগে নিউজ দেবে, এ নিয়ে হুড়োহুড়ি। নিউজ বা ছবি ছাপার আগে কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে, এটা সাংবাদিকতার প্রাথমিক পাঠ। কিন্তু প্রতিযোগিতার মাঠে আমরা সেই পাঠ মাঝে মাঝে ভুলে যাই। তবে ভুল থেকে যেন আমরা শিক্ষা নেই যে, ভবিষ্যতে যাচাই ছাড়া কোনো নিউজ বা ছবি ছাপবো না। আমি মনে করি যারা ইচ্ছা করে মানুষকে হেয় করে, মিথ্যা নিউজ ছাপে; তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি সাংবাদিকদের ব্যবস্থা নিওয়া উচিত। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ গণমাধ্যমকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। মোবাইল ফোন এখন বিশ্বের এক নম্বর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। সাংবাদিকদের বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে সিটিজেন জার্নালিজম। এখন সবার হাতেই স্মার্টফোন। যেকোনো ঘটনার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিলেই মুহূর্তেই মানুষ জেনে যাচ্ছে। খবরটি জানার জন্য পরদিন পত্রিকার অপেক্ষা করতে হয় না। যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশে প্রকৃত সাংবাদিকতার বিকাশ শুরু হয় ১৯৯১ সাল পরবর্তী সময়ে। তখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ক্ষমতায় আসেন। বর্তমানে দেশে গণমাধ্যমের সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে অনেক সংবাদপত্র, সাপ্তাহিক পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, অনলাইন প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু হয়েছে। কিন্ত আমার প্রশ্ন সাংবাদিকতার মান কেন বিকাশিত হচ্ছে না। এদিকে আমাদের খেয়াল রাখা অতি জরুরী হয়ে পড়েছে। সাংবাদিকতায় পেশাগত বিচ্যুতির যে প্রবণতা শুরু হয়েছে তা এক রুগ্ন বাস্তবতা তৈরি করছে। আজ সাংবাদিকতার অনুসরণীয় নীতিমালা সমুন্নত রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।সাংবাদিকতা একটি ছদ্মবেশী আবরণের মধ্যে পড়েছে। পদ-পদবি, সমিতি সবকিছু সাংবাদিকতার আদলে সার্ভ করা হচ্ছে রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক বা গোষ্ঠীবাদী স্বার্থ। মূলধারা সংবাদমাধ্যম যারা নৈতিকতা ও মানের সাংবাদিকতার চেষ্টা করছেন এ নেক্সাস তাদের বিরুদ্ধে কারণে-অকারণে উঠে পড়ে লাগছে। ফলে তারা কাজ করতে পারছে না।সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক প্রসার পেশাদারি সাংবাদিকতা বিকাশের ক্ষেত্রটি কণ্টকাকীর্ণ করে তুলেছে। এ জন্য যে পরিমাণ পেশাদার জনবল ও সুবিধা দরকার তার অপ্রতুলতা রয়েছে। এ কারণে সাংবাদিকতার মানোন্নয়নের সুযোগটি খুবই সীমিত। যতটুকু হচ্ছে তা হাউসগুলোর অভ্যন্তরীণ চর্চায় কারণে হচ্ছে। সাংবাদিকতার ক্ষতগুলো অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখতে না পারলে এ জাতি অনেক বিপদে পড়বে।
আওরঙ্গজেব কামাল
লেখক ও গবেষক
সভাপতি:ঢাকা প্রেস ক্লাব
01716184411